Skip to main content

ঐকতান

এখন শুরু হবে, লাইন বাই লাইন এক্সপ্লেনেশন

>> বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি।
দেশে দেশে কত- না নগর রাজধানী-
মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু,
কত- না অজানা জীব, কত- না অপরিচিত তরু
রয়ে গেল অগোচরে। <<
ব্যাখা:- এই পৃথিবী বিশাল এবং বিপুল আয়তনের। এখানে জানার মত কত্ত কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কিন্তু তার কতটুকুই বা জানি! দেশে দেশে কতই না শহর-রাজধানী আছে। মানুষের কত কীর্তি, নদী, গিরি (পাহাড়), সিন্ধু (সাগর), মরু (মরুভুমি) ই না আছে এই বিশালাকার পৃথিবীতে! কত অজানা জীব, অপরিচিত গাছপালা এখনো আমার জানার বাহিরেই রয়ে গেল। আমি তার সান্নিধ্য ও পেলাম না।
>> বিশাল বিশ্বের আয়োজন;
মন মোর জুড়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র তারি এক কোণ।
সেই ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ ভ্রমণবৃত্তান্ত আছে যাহে
অক্ষয় উৎসাহে - <<
ব্যাখা: এ বিশ্বের আয়োজন বিশাল। কিসের আয়োজন! জানার/জ্ঞান আহরণ করার আয়োজন। কিন্তু, কবির মন তারই ক্ষুদ্র এক কোণ জুড়ে থাকে। অর্থাৎ, কবি এখানে তার জানার সীমাবদ্ধতাটুকু অকপটে প্রকাশ করেছেন। কবি, সেই ক্ষোভে, অর্থাৎ জানার সীমাবদ্ধতার ক্ষোভে বই পড়েন। ভ্রমণকাহিনী পড়েন। অর্থাৎ, কবি হয়ত সকল দেশ, সকল রাজধানী, সকল অজানা কিছু জানতে পারেন নি। এটা তার সীমাবদ্ধতা। কিন্তু, তিনি তার সীমাবদ্ধতাটুকু দূর করার জন্য বই বা ভ্রমণকাহিনী পড়ছেন। যাতে করে, সমস্ত দেশ বা নগর না ঘুরলেও যাতে কবি সব জায়গা থেকে কিছু হলেও জ্ঞানার্জন করতে পারেন।
>> যেথা পাই চিত্রময়ী বর্ণনার বাণী
কুড়াইয়া আনি।
জ্ঞানের দীনতা এই আপনার মনে
পূরণ করিয়া লই যত পারি ভিক্ষালব্ধ ধনে। <<
ব্যাখা: একটা প্রবাদ আছে। Pictures say thousand words! অর্থাৎ, কোনো কিছুর সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ জানার জন্য, তুমি যদি খালি গৎবাধা লেখা পড়ো, তাহলে তোমার জানাটা স্বল্পস্থায়ী হবে। কিন্তু, বর্ণনাটা যদি চিত্রময়ী হয়, বা যদি ছবির মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়, তবে সেই জানাটা তোমার মনে দাগ কেটে যাবে। কবি এই চিত্রময়ী বর্ণনাগুলোকেই কুড়িয়ে আনেন। কবি আরো বলেছেন, তার জ্ঞানের দীনতা আছে। অর্থাৎ, তিনি জ্ঞানের দিক থেকে গরীব। কিন্তু, তারপর ও তিনি বিভিন্ন সূত্র থেকে জ্ঞান আহরণ করে তার জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেন।
>> আমি পৃথিবীর কবি, যেথা তার যত উঠে ধ্বনি
আমার বাঁশির সুরে সাড়া তার জাগিবে তখনি, <<
ব্যাখা: কবি নিজেকে পৃথিবীর কবি হিসেবে ঘোষিত করেছেন। এবং বলেছেন, মানুষেরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, কবির বাঁশির সুর [এখানে, কবিতার সুর] সর্বত্রই সাড়া প্রদান করবে।
>> এই স্বরসাধনায় পৌঁছিল না বহুতর ডাক -
রয়ে গেছে ফাঁক। <<
ব্যাখা: অর্থাৎ, কবির কবিতার সূর সর্বত্র পৌঁছাতে পারেনি। কবির চাওয়া, এবং তার কবিতার সুর প্রান্তিক মানুষের পাওয়ার মধ্যে এখনো বিস্তর ব্যবধান বা ফারাক রয়েই গেছে।
>> প্রকৃতির ঐকতানস্রোতে
নানা কবি ঢালে গান নানা দিক হতে; <<
ব্যাখা: রবিঠাকুর বলেছেন, তার মতই আরো অনেক কবি, বিভিন্ন দিক থেকে কবিতা রচনা করে। এবং সেই কবিতার সূরগুলো পৌঁছে দিতে চায় মানুষদের কাছে।
>> তাদের সবার সাথে আছে মোর এইমাত্র যোগ-
সঙ্গ পাই সবাকার, লাভ করি আনন্দের ভোগ, <<
ব্যাখা: অর্থাৎ, ঐ সকল কবির সাথেই রবিঠাকুর এর যোগাযোগ রয়েছে। এবং তাদের সবার সঙ্গ পেয়ে কবি বরং আনন্দিতই হন।
>> পাই নে সর্বত্র তার প্রবেশের দ্বার,
বাধা হয়ে আছে মোর বেড়াগুলি জীবনযাত্রার। <<
ব্যাখা: অর্থাৎ, রবিঠাকুর চাইলেও সেই সকল কবির সাথে মিশতে পারেন না। কেননা, কবিগুরুর জীবনযাত্রা আর তাদের জীবনযাত্রায় যে এখনও ব্যবধান! এখানে খুব সম্ভবত ধনী-গরীব শ্রেণীর ব্যবধান এর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
>> চাষি খেতে চালাইছে হাল,
তাঁতি বসে তাঁত বোনে, জেলে ফেলে জাল-
বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার
তারি পরে ভর দিয়ে চলিতেছে সমস্ত সংসার। <<
ব্যাখা: এখানে কবি, সমাজের প্রান্তিক/শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর পেশাকে মর্যাদা দিয়েছেন। এবং বলেছেন, তাদের কাজের উপর নির্ভর করেই সংসার এগিয়ে যাচ্ছে।
>> অতি ক্ষুদ্র অংশে তার সম্মানের চিরনির্বাসনে
সমাজের উচ্চ মঞ্চে বসেছি সংকীর্ণ বাতায়নে। <<
ব্যাখা: কবি এখানে বলেছেন, তিনি সমাজের উচ্চ মঞ্চে আসন গ্রহন করেছেন। এবং সাধারণ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। ফলে, সেই উঁচু মঞ্চের সংকীর্ণ জানালা দিয়ে সাধারণ মানুষদের এ বড় সমাজটিকে তিনি দেখতে পারেন নি।
>> মাঝে মাঝে গেছি আমি ও পাড়ার প্রাঙ্গণের ধারে,
ভিতরে প্রবেশ করি সে শক্তি ছিল না একেবারে। <<
ব্যাখা: কবি মাঝে মাঝে ঐ সকল সাধারণ শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর পাড়ায় উঁকি দিয়েছেন। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের সাথে ভালোভাবে যোগসূত্র রচনা করতে পারেন নি।
>> জীবনে জীবন যোগ করা
না হলে কৃত্রিম পণ্যে ব্যর্থ হয় গানের পসরা। <<
ব্যাখা: কবির কবিতা যদি জীবনের সাথে জীবনই যোগ করতে না পারে, অর্থাৎ ধনী-গরীব/উচ্চশ্রেনী-নিম্নশ্রেনীর মাঝে অপূর্ব মেলবন্ধনই তৈরি করতে না পারে, তবে সেই কবিতা মূল্যহীন। এসব প্রান্তিক মানুষকে শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে যোগ্য স্থান দিলেই কেবল সাহিত্যসাধনা পূর্ণতা পায়।
>> তাই আমি মেনে নিলাম সে নিন্দার কথা
আমার সূরের অপূর্ণতা।
আমার কবিতা, জানি আমি,
গেলেও বিচিত্র পথে হয় নাই সে সর্বত্রগামী। <<
ব্যাখা: কবি নিজের সীমাবদ্ধতাটুকু মেনে নিলেন। অনেকেই কবির নামে নিন্দে করত, যে তিনি শুধু বাবুসাহেব দেরকে নিয়েই সাহিত্য রচনা করেন। কবি সেই নিন্দেটুকুও মেনে নিলেন। কবি নিজেই জানেন, তার কবিতা বিচিত্র পথে গেলেও সর্বত্র পৌঁছাতে পারেনি।
>> কৃষাণের জীবনের শরিক যে জন,
কর্মে ও কথায় সত্য আত্মীয়তা করেছে অর্জন, <<
ব্যাখা: কৃষকের জীবনের মত জীবন যে অতিবাহিত করতে পারছে, সে সত্যিই কথায় ও কাজে আত্মীয়তা অর্জন করতে পেরেছে।
আত্মীয়তা? কাদের সাথে আত্মীয়তা?
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে।
>> এসো কবি অখ্যাতজনের
নির্বাক্ মনের।
মর্মের বেদনা যত করিয়া উদ্ধার- <<
ব্যাখা: বিখ্যাত শব্দের বিপরীত হল অখ্যাত। এখানে, রবিঠাকুর এমন কবিকে আহবান করছেন, যিনি এসব অখ্যাত মানুষদের জীবনকে আবিষ্কার করতে পারবেন। অর্থাৎ, সাধারণ কর্মজীবী মানুষদের জীবনকে কবিতার দ্বারা তুলে ধরার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি, কবিগুরুর কবিতা সর্বত্রগামী না হওয়ার যে ব্যাথা, সেই মর্মের ব্যাথা উদ্ধার করার জন্য তিনি নতুন কবিকে আহবান করেছেন।
>> প্রাণহীন এ দেশেতে গানহীন যেথা চারি ধার,
অবজ্ঞার তাপে শুষ্ক নিরানন্দ সেই মরুভুমি
রসে পূর্ণ করি দাও তুমি। <<
ব্যাখা: কবি এখানে বুঝাতে চেয়েছেন, যে সাহিত্যের ভুবন আনন্দহীন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। কারণ, সমাজের শ্রমজীবী মানুষেরা সাহিত্যসভায় উপেক্ষিত। তারা সাহিত্যে স্থান পায়নি। এজন্য কবি আহবান করেছেন নতুন আরেক কবিকে, যিনি এসব শ্রমজীবী মানুষদের স্থান দিবেন সাহিত্যের ভুবনে। এবং সাহিত্যভুবন এর উষরতা (শুষ্কতা) কে রসে পূর্ণ করে দিবেন।
>> অন্তরে যে উৎস তার আছে আপনারি
তাই তুমি দাও গো উদবারি। <<
ব্যাখা: উদবারি মানে হল, উপরে বা উর্ধ্বে প্রকাশ করা। কবি বলছেন, হে নতুন কবি, তোমার অন্তরে যে রসের উৎস আছে, তা উন্মুক্ত করে দাও।
>> সাহিত্যের ঐকতানসংগীতসভায়
একতারা যাহাদের তারাও যেন সম্মান পায় - <<
ব্যাখা: অর্থাৎ, সাহিত্যের সভায়, যেখানে জীবনের সূর যোগ করা হয়, সেখানে যেন অবজ্ঞাত বা উপেক্ষিত মানুষেরাও সম্মান লাভ করে।
>> মূক যারা দু:খে সুখে,
নতশির স্তব্ধ যারা বিশ্বের সম্মুখে,
ওগো গুণী,
কাছে থেকে দূরে যারা তাহাদের বাণী যেন শুনি। <<
ব্যাখা: কবি বলেছেন, তিনি সেসব লোকেদের বাণী শুনতে চান, যারা কাছে থেকেও দূরে। যারা দু:খ-সুখ সহ্য করা নির্বাক মানুষ। যারা এগিয়ে চলা পৃথিবীতে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না।

Comments

Popular posts from this blog

প্রবাদ বাক্য

★★সব ভার্সিটিতে কমপক্ষে একটা প্রশ্ন থাকবে★★ : ১, অভাবে সভাব নষ্ট- Necessity knows no law. ২, অতি চালাকের গলায় দড়ি- Too much cunning overreaches itself. ৩, অতি লোভা তাতি নষ্ট- To kill the goose that lays golden eggs./ All covet, all lost. ৪, অতি ভক্তি চোরের লক্ষন- Too much courtesy, full of craft. ৫, অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট- Too many cooks spoil the broth. ৬, অস ময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু- A friend in need is a friend indeed. ৭, অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী- A little learning is a dangerous thing. ৮, অপচয়ে অভাব ঘটে-Waste not, want not. ৯, অন্ধকারে ঢিল মারা-Beat about the bush. ১০, অন্ধের কিবা রাত্রি কিবা দিন-Day and night are alike to a blind man. ১১, অপ্রিয় সত্য কথা বলতে নেই- Do not speak an unpleasant truth. ১২, অরণ্যে রোদন/ বৃথা চেষ্টা- Crying in the wilderness. ১৩, অর্থই অন অনর্থের মূল-Money is the root cause of all unhappiness. ১৪, অহংকার পতনের মূল-Pride geoth before destruction. ১৫, অহিংসা পরম ধর্ম-Love is the best virtue. ১৬, অসারের গর্জন তর্জন সার/খালি কলসি বাজে বে...

ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম:: ৬ষ্ট অধ্যায়

ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ````````````````````````` '''''''''''''''''''''''' * ডাটাবেজ কি বা কাকে বলে? উত্তর: পরষ্পর সম্পর্কযুক্ত কতগুলো ডাটার সমষ্টিকে Database বলে। . → DBMS এর পূর্ণরূপ Database Management System. . → RDBMS এর পূর্ণরূপ - Relational Database Management System. . ** DBMS কি বা কাকে বলে? উত্তর: DBMS হলো একটি প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার। DBMS এর পূর্ণরূপ ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। DBMS দ্বারা ডাটাবেজ তৈরি করা, ডাটাবেজ পরিবর্তন করা, সংরক্ষণ করা, পরিচালনা করা, নিয়ন্ত্রণ করার কাজ করা সম্ভব। . ** ফিল্ড (Field) কি? উত্তর: রেকর্ডের ক্ষুদ্রতম অংশকে Field বলে। . * রেকর্ড (Record) কি? উত্তর: কতগুলো Field এর সমষ্টিকে রেকর্ড বলে। . ** ডাটাবেজের সুবিধা বা বৈশিষ্ট্য : → ডাটাবেজকে Assendung ও Decending করা যায়। → ডাটাবেজকে সর্টিং ও ইনডেক্সিং ভাবে সাজানো যায়। → সকল তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা যায়। → ডেটা নিরাপত্তা প্রদান করা সম্ভব। → কেন্দ্রীয়ভাবে ডাটা নিয়ন্ত্রণ কর...

এইচএসসি::: english grammer এর 3 no question

পরীক্ষার্থীদের জন্য english grammer এর 3 no question এর shortcut rules নিয়ে আসলাম। shortcut rules of item 3 1.cannot যুক্ত বাক্য থাকলে let alone বসে। example:he cannot buy a new shirt let alone a jins pant.. 2.(singel) than থাকলে would rather বসে। example:i would rather die than beg. 3.তারাতারি বোঝাতে as soon as বসে। example:the teacher entered the class room as soon as,the student stood up. ৪.জন্মগ্রহন বোঝালে was born বসে।example :he was born in1979. ৫.কোনো কিছু করতে না পারাতে,,as if / as though বসে। example :he talks as if/as though he is rich man. ৬. দুইটা ড্যাস থাকলে এবং শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন থাকলেwhat does... look like বসে। ৭. প্রথমে একটা ড্যাস এবং শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন থাকলে what's if বসে। ৮.বরং এটা করা উচিত অর্থে had better বসে। example :you had better to read more for coming exam. ৯.বাধ্যবাধকতা বোঝাতে have to বসে। example :you have to finish your work. ১০.কাছের কোনকিছু বোঝাতে it এবং দুরের কোন জিনিস বোঝাতে there ব্যবহৃত হয়। example :it is/was our...